রাসূলুল্লাহ (সা.) এর প্রতি আল্লাহ তা‘আলার রহমত ও দয়ার আচরণ।
উর্ধ্ব জগতে আল্লাহ তা‘আলা এবং তাঁর প্রিয় ফেরেশতাদের নিকট রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সু-মহান মর্যাদা সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বান্দাদের জানিয়ে বলেনঃ আল্লাহ নবীর প্রতি সালাত (রহমত) প্রেরণ করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণ তাঁর জন্য সালাত (রহমত ও মর্যাদা বৃদ্ধির দুআ) করতে থাকেন। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৬]।
এবং জমিনে মুমিনদের নির্দেশ দিয়েছেন রাসূলের প্রতি দরূদ ও সালাম প্রেরণ করার জন্য যাতে তাঁর জন্য আসমান ও জমিনের অধিবাসী সকলের প্রশংসার সমাহার ঘটে। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ হে মুমিনগণ! তোমরা নবীর জন্যে রহমতের তরে দোয়া কর এবং তাঁর প্রতি সালাম প্রেরণ কর। [সূরা আল-আহযাব, আয়াত: ৫৬]।
আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক নবীর জন্য “সালাত” এর অর্থ হলো, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর রহমত বর্ষণ করেন, আর ফেরেশতাগণ কর্তৃক নবীর জন্য “সালাত” এর অর্থ হলো তাঁরা নবীজীর জন্য রহমত ও মর্যাদা বৃদ্ধির দুআ করেন।
আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক রাসূল (সা.) কে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় নামে সম্বোধন করণঃ
এটা জ্ঞাতব্য যে আল্লাহ তা‘আলা নবী-রাসূলগণকে তাঁদের নাম ধরে সম্বোধন করেছেন।
যেমন তিনি আদম আলাইহিস সালামকে ডেকেছেন তাঁর নাম ধরে, তিনি বলেনঃ হে আদম তুমি এবং তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস কর। [সূরা আল-আরাফ, আয়াত: ১৯]।
নূহ আলাইহিস সালামকে ডেকেছেন তাঁর নাম ধরে, তিনি বলেনঃ হে নূহ! আমার পক্ষ হতে নিরাপত্তা সহকারে অবতরণ কর। [সূরা হুদ, আয়াত: ৪৮]।
ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে ডেকেছেন তাঁর নাম ধরে, তিনি বলেনঃ তখন আমি তাকে ডেকে বললাম, হে ইবরাহীম, তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখালে!। [সূরা আস-সাফফাত, আয়াত: ১০৪, ১০৫]।
ইয়াহইয়া আলাইহিস সালামকে ডেকেছেন তাঁর নাম ধরে, তিনি বলেনঃ হে ইয়াহইয়া দৃঢ়তার সাথে এই গ্রন্থ ধারণ কর। [সূরা মারইয়াম, আয়াত: ১২]।
মূসা আলাইহিস সালামকে ডেকেছেন তাঁর নাম ধরে, তিনি বলেনঃ হে মূসা, আমি তোমাকে আমার বার্তা পাঠানোর এবং কথা বলার মাধ্যমে লোকদের উপর বিশিষ্টতা দান করেছি। [সূরা আল-আরাফ, আয়াত: ১৪৪]।
ঈসা আলাইহিস সালামকে ডেকেছেন তাঁর নাম ধরে, তিনি বলেনঃ হে ঈসা ইবনে মরিয়ম! তুমি কি লোকদেরকে বলেছিলে যে, আল্লাহকে ছেড়ে আমাকে ও আমার মাতাকে উপাস্য সাব্যস্ত কর?। [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ১১৬]।
কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা তাঁর প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে কখনো সরাসরি নাম সম্বোধন করে ডাকেননি, বরং তার উপাধি সমূহ দিয়ে সম্বোধন করেছেন। যেমন বলেছেনঃ “হে নবী”, “হে রাসূল”, “হে মুযযাম্মিল”, “হে মুদ্দাসসির” ইত্যাদি, যা সম্মান ও ভালোবাসার শব্দ।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে “নবুওয়াত” ও “রিসালাত” এর দিকে সম্পৃক্ত করে ডাকা ছিলো সেগুলোর সাথে সামঞ্জস্য মূলক সম্মান সূচক সম্বোধন। এমনকি যখন আল্লাহ তা‘আলা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এক সাথে উল্লেখ করেছেন তখনও ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর নাম সম্বোধন করে উল্লেখ করেছেন আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নবী সম্বোধন করে উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ মানুষদের মধ্যে যারা ইবরাহীমের অনুসরণ করেছিল, তারা, আর এই নবী এবং যারা এ নবীর প্রতি ঈমান এনেছে তারা ইবরাহীমের ঘনিষ্ঠতম, আর আল্লাহ হচ্ছেন মুমিনদের বন্ধু। [সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৬৮]।
আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক রাসূলুল্লাহ (সা.) এর হায়াত ও জীবন এর শপথ।
আমরা জানি যে, কোনো মানুষের জীবন নিয়ে শপথ করা শপথকারীর কাছে ঐ মানুষের স্থান ও সম্মানের দলীল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মর্যাদা ও গৌরবের বিষয় হলো আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআন করীমে তাঁর জীবন নিয়ে শপথ করেছেন, তিনি বলেনঃ তোমার জীবনের কসম! তারা নিঃসন্দেহ তাদের মত্ততায় অন্ধভাবে ঘুরছিল। [সূরা আল-হিজর, আয়াত: ৭২]।
ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেনঃ আল্লাহ তা‘আলা এমন কোনো প্রাণী সৃষ্টি করেন নি যা তাঁর কাছে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে অধিক মর্যাদা সম্পন্ন ও প্রিয়। আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ (সা.) ছাড়া অন্য কারো জীবন নিয়ে শপথ করেছেন এমনটি আমরা শুনি নাই কখনো। তিনি বলেনঃ তোমার জীবনের কসম! তারা নিঃসন্দেহ তাদের মত্ততায় অন্ধভাবে ঘুরছিল। [সূরা আল-হিজর, আয়াত: ৭২]। তাফসীরে তাবারী।
রাসূলুল্লাহ (সা.) এর মু’জিযা কিয়ামত অবধি বিদ্যমান।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের দলীলসমূহের একটি দলীল হলো, প্রত্যেক নবীর সময় শেষ হওয়ার সাথে সাথে তাঁর মু’জিযাও শেষ হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সবচেয়ে বড় মু’জিযা - আল কুরআন - কিয়ামত পর্যন্ত অবশিষ্ট থাকবে।
এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ প্রত্যেক নবীকে এমন মু’জিযা দেওয়া হয়েছে যে মু’জিযা অনুযায়ী মানুষ তাঁর প্রতি ঈমান এনেছে। পক্ষান্তরে আমাকে যে মু’জিযা প্রদান করা হয়েছে,তা হচ্ছে আল্লাহ প্রেরিত ওহী (আল কুরআন), সূতরাং কিয়ামতের দিন আমার অনুসারীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি হবে বলে আমি আশা রাখি। (বুখারী ও মুসলিম)।
আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মু’জিযাকে শুধু স্থায়ী করেননি বরং তাঁর এই চিরন্তন মু’জিযা (কুরআন করীম) কে তিনি কিয়ামত পর্যন্ত ভুল ও বিকৃতি থেকে রক্ষা করার দায়িত্ব নিয়েছেন। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ আমি স্বয়ং এ উপদেশ গ্রন্থ অবতীর্ণ করেছি এবং আমি নিজেই এর সংরক্ষক। [সূরা আল-হিজর, আয়াত: ৯]।
পক্ষান্তরে অন্যান্য নবী-রাসূলদের ধর্মীয় গ্রন্থসমূহের সংরক্ষণের দায়িত্ব তাঁদের সম্প্রদায়কে দেওয়া হয়েছিল, পূর্ববর্তী গ্রন্থসমূহ সম্পর্কে তিনি বলেনঃ আল্লাহ্র কিতাবের যা তারা সংরক্ষণ করতো তার দ্বারা। [সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৪৪]। (গ্রন্থসমূহ সংরক্ষণের দায়িত্ব তাদেরকে দেওয়া হয়েছিল কিন্তু তারা তা পারে নি)।
উম্মতের মাঝে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর থাকা অবস্থায় তাদেরকে আযাব থেকে নিরাপদ রাখার নিশ্চয়তা।
উম্মতে মুহাম্মদি আল্লাহ তা‘আলার আযাব থেকে রক্ষা পাওয়ার দুটি পথ থেকে একটি হলো রাসূলুল্লাহ (সা.) উম্মতের মাঝে থাকা। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ এবং আল্লাহ কখনই তাদের উপর আযাব নাযিল করবেন না যতক্ষণ আপনি তাদের মাঝে অবস্থান করবেন। এছাড়া তারা যতক্ষণ ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে আল্লাহ ততক্ষণও তাদের উপর আযাব দেবেন না। [সূরা আল-আনফাল,আয়াত: ৩৩]।
রাসূলুল্লাহ (সা.) শাফাআতে উযমা বা মহান সুপারিশের অধিকারী হওয়া।
শাফায়াতে উযমা’র অধিকারী হওয়া কিয়ামতের দিন সর্বোচ্চ সম্মান, বান্দাদের মধ্যে একজন বান্দাই এ সম্মান পাবেন আর তিনি হলেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত যে, তিনি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, … আল্লাহর কাছে আমার জন্য ওসীলার দুআ করবে। ওসীলা হল জান্নাতের একটি বিশেষ সম্মান,যা আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে কোন এক বান্দাকে দেয়া হবে। আমি আশা করি যে, আমিই হব সেই বান্দা। যে আমার জন্য ওসীলার দুআ করবে, তার জন্য আমার শাফাআত আবর্তিত হবে। (সহীহ মুসলিম)।
কিয়ামতের দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কতিপয় সুপারিশের অধিকারী হবেন, তার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হলো শাফাআতে উযমা বা “মহান সুপারিশ”, আর এটাই হলো ঐ “মাক্বামে মাহমুদ” যার ওয়াদা করেছেন আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ রাত্রির কিছু অংশ কুরআন পাঠ সহ জাগ্রত থাকুন। এটা আপনার জন্যে অতিরিক্ত। হয়তবা আপনার পালনকর্তা আপনাকে মাক্বামে মাহমুদে পৌঁছাবেন। [সূরা আল-ইসরা,আয়াত: ৭৯]।
এ শাফাআত দ্বারা হাশরের ময়দানে সকলেই উপকৃত হবে। এই শাফায়াত হাশরের ময়দানের দূর্বিসহ যাতনা ও ভয়াবহ অবস্থা থেকে উত্তরণ ও হিসাব কিতাব তরান্বিত করার জন্য হবে। যখন আল্লাহ তা‘আলা হাশরের ময়দানে হিসাব-নিকাশে দেরি করবেন এবং অপেক্ষার পালা অনেক দীর্ঘ হয়ে পড়বে। সৃষ্টিকূলের দুঃখ-কষ্ট ও দুশ্চিন্তা সহ্যের সীমা অতিক্রম করে যাবে তখন তারা বলতে থাকবেঃ “আমাদের রবের কাছে আমাদের জন্য কে সুপারিশ করবে” যাতে তিনি বান্দাদের মাঝে ফায়সালা করে দেন। সকলেই এই স্থান থেকে স্থানান্তরিত হতে চাইবে, তখন মানুষ নবী-রাসূলদের কাছে আসবে, তখন তাঁরা প্রত্যেকেই বলবেন, আমি এর যোগ্য নই। অতঃপর তারা যখন আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট আসবে তখন তিনি বলবেন, আমি এর যোগ্য, আমিই এর উপযুক্ত। (সহীহ বুখারীর হাদীস থেকে), তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিচারকার্য শেষ করার জন্য সুপারিশ করবেন, আর এই অতি উচ্চমাত্রার সুপারিশের অধিকারী হওয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বৈশিষ্ট্য সমূহের অন্যতম একটি।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জন্য শাফাআতে উযমা বা মহান সুপারিশের বিশেষত্বের তাৎপর্য কী? এবং আপনার মতে এর হিকমত কী?
হিসাব-নিকাশ শেষে জান্নাতে সর্বপ্রথম প্রবেশকারী হিসেবে রাসূলুল্লাহ (সা.) কে বিশেষ ভাবে সম্মানীত করণঃ
কারণ জান্নাতিরা জান্নাতে প্রবেশ করার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুপারিশ করবেন। আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কিয়ামত দিবসে আমি জান্নাতের তোরণে এসে দরজা খোলার অনুমতি চাইবো। তখন দ্বাররক্ষী বলবেন, আপনি কে? আমি উত্তর করবো, মুহাম্মাদ। দ্বাররক্ষী বলবেন, "আপনার জন্যই আমি আদিষ্ট হয়েছি যেন আপনার আগে অন্য কারোর জন্য যেন আমি এর দরজা না খুলি”। (সহীহ মুসলিম)।
তাঁর থেকে বর্ণিত অন্য হাদীসে আসছেঃ জান্নাতে লোকদের প্রবেশ সম্পর্কে আমিই হবো সর্বপ্রথম সুপারিশকারী। (সহীহ মুসলিম)।
রাসূলুল্লাহ (সা.) কে হাউজে কাওসার দান করার মাধ্যমে মহিমান্বিত করা হয়েছে।
এটি জান্নাতের একটি নদী যা আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দান করেছেন।
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে ছিলেন। হঠাৎ তাঁর কিছুটা তন্দ্রার ভাব হল, এরপর তিনি মুচকি হেসে মাথা উঠালেন। আমরা বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কিসে আপনার হাসি এল? তিনি বললেন, এই মাত্র আমার উপর একটি সূরা নাযিল হয়েছে। এরপর তিনি তা তিলাওয়াত করেনঃ বিসমিল্লা-হির রহমা-নির রহীম': অবশ্যই আমি আপনাকে কাওসার দান করেছি। সুতরাং আপনি আপনার রবের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় করুন এবং কুরবানী করুন। নিশ্চয় আপনার প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারীই তো নির্বংশ। [সূরা আল- কাওসার, আয়াত: ১-৩]।
এরপর বললেন, তোমরা কি জানো (কাওসার) কি? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলই ভাল জানেন। তিনি বললেন, সেটি হল একটি নদী। আল্লাহ তা‘আলা আমাকে যার ওয়াদা করেছেন। সেখানে বহু কল্যাণ রয়েছে। সেটি একটি জলাশয়। কিয়ামতের দিন আমার উম্মত (পানি পানের জন্য) সেখানে আসবে। তার পাত্রের সংখ্যা হবে আকাশের তারকারাজীর সমান।
অতঃপর তাদের মধ্যে থেকে একজন বান্দাকে সেখান থেকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয়া হবে। তখন আমি বলব, পরোয়ারদেগার! সে তো আমার উম্মত। তখন তিনি আমাকে বলবেন, নিশ্চয়ই আপনি জানেন না, সে আপনার পরে (শরীয়তের পরিপন্থী অর্থাৎ বিদআত) কি নতুন বিষয় আবিস্কার করেছিল। (সহীহ মুসলিম)।
অতএব, উপরোক্ত বর্ণনা থেকে আমাদের কাছে স্পষ্ট হল যে আল্লাহ তা‘আলার নিকট রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহান মর্যাদা ও সম্মানের অধিকারী, আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে মনোনীত করেছেন, সকল মানবজাতির উপর তাঁকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং সকল নবী-রাসূলদের উপর তাঁকে উচ্চ মর্যাদা দান করেছেন, তাঁর বক্ষ প্রশস্ত করেছেন, তাঁর আলোচনাকে সমুচ্চ করেছেন, তাঁর বোঝা লাঘব করেছেন, তাঁর সম্মান বৃদ্ধি করেছেন।
আল্লাহ তা‘আলা যখন তাঁকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন এবং তাঁকে সু-মহান মর্যাদায় অভিহিত করেছেন তাহলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমাদের দায়িত্ব হলো তাঁকে যথাযথ সম্মান করা, তাঁর প্রশংসা করা, তাঁকে শ্রদ্ধা করা এবং তাঁর আদেশ পালন করা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ যেন তোমরা আল্লাহ্র প্রতি ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনতে পার, এবং তাঁকে সাহায্য করতে ও সম্মান করতে পার, আর যেন তোমরা তাঁর নাম তাসবিহ পাঠ করতে পারো ভোরে ও সন্ধ্যায়। [সূরা আল-ফাতহ, আয়াত: ৯]।
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেনঃ তোমাদের মধ্যে রাসূলের আহ্বানকে তোমরা তোমাদের মধ্যের একে অন্যে আহ্বানের মতো গণ্য করো না। আল্লাহ তাদেরকে জানেন, যারা তোমাদের মধ্যে চুপিসারে সরে পড়ে। অতএব যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তারা এ বিষয়ে সতর্ক হোক যে, বিপর্যয় তাদেরকে স্পর্শ করবে অথবা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করবে। [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৬৩]।
আমাদের দায়িত্ব হলো আল্লাহ তা‘আলা তাঁর যে মর্যাদা ও ফযিলত সাব্যস্ত করেছেন বাড়াবাড়ি বা ছাড়াছড়ি না করে তাঁর জন্য তা সাব্যস্ত করা, মনে রাখতে হবে তিনি আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল এবং তাঁর সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ মহানজন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে কবি কতইনা সুন্দর বলেছেন!, কবি বলেনঃ
এই টুকুনে তুষ্ট থাকো
তিনিই সেরা সৃষ্টি খোদার
মানব বটে—তবু ধরায়
নেই যে কোনই তুলনা তাঁর।
দুনিয়া ও আখিরাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সু-মহান মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের কথা জানার পর আপনার মতে আমরা দুনিয়াতে কীভাবে তাঁর হক আদায় করতে পারি?