রাসূলুল্লাহ (সা.) এর মাথার গড়ন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মাথা ছিল আকারে বৃহৎ। (মুসনাদে আহমাদ), অর্থাৎ তাঁর মাথা ছিল একটু বড় ধরণের, বলা হয় এটি মস্তিষ্কের ক্ষমতার পরিপূর্ণতা ও পরিপক্কতার আলামত।
রাসূলুল্লাহ (সা.) এর চেহারা মুবারক।
বারা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেহারা মুবারক ছিল মানুষের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর এবং তিনি ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। (সহীহ বুখারী)।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেহারা মুবারক ছিল গোলাকার, জাবির ইবন সামুরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চেহারা ছিল সূর্য ও চন্দ্রের মত গোলাকার। (সহীহ মুসলিম)।
তাঁর চেহারা একেবারে গোল ছিলনা বরং লম্বাটে গোল ছিল। রুবাই’ঈ বিনতে মুয়াব্বিয রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা কে বলা হয়েছে, আপনি আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অবয়বের বর্ণনা দিন। রুবাই’ঈ বিনতে মুয়াব্বিয (রা.) বললেন: তুমি যদি তাঁকে দেখতে তাহলে তুমি বলতে, সূর্য উদিত হয়েছে! (সুনান আদ-দারেমী, তাবারানী, বায়হাকী)।
জাবির ইবন সামুরাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন: আমি এক চাঁদনী রাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, আমি একবার তাঁর দিকে আরেকবার চাঁদের দিকে তাকাচ্ছিলাম। আল্লাহর কসম আমার চোখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে চাঁদের চেয়ে বেশি সুন্দর লাগছিলো। (সুনান আদ-দারেমী, বায়হাকী)।
রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কপাল মুবারক।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কপাল ছিলো প্রশস্ত। (বায়হাকী, বাযযার ও অন্যান্য হাদীস গ্রন্থ)।
“জাবীন” আর “জাবহা” শব্দদ্বয় এর অর্থ অনেকেই কপাল বা ললাট বলেছে, কিন্তু শব্দদ্বয় এর অর্থে পার্থক্য আছে। “জাবহা” অর্থ কপাল, আর “জাবীন” হলো কপালের ডানে ও বামের দুপার্শ্ব যা কপালকে বেষ্টন করে রেখেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কপালের এ দুপার্শ্ব প্রশস্ত ছিল, আর এ দুপার্শ্ব প্রশস্ত হওয়াটা প্রত্যেক রুচিবান মানুষের নিকট প্রশংসনীয় একটি বিষয়।
রাসূলুল্লাহ (সা.) এর পবিত্র ভ্রু যুগল।
রাসূলুল্লাহ (সা.) এর এর পবিত্র ভ্রু যুগল লম্বা, ধনুকসদৃশ ছিল, ভ্রু যুগল সম্মিলিত ছিল না, ভ্রুযুগলের মধ্যবর্তী স্থানে একটি রগ ছিলো, যা রাগান্বিত অবস্থায় ভেসে উঠতো, হিন্দ ইবন আবী হালা (রা.) বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ভ্রু যুগল লম্বা ছিল, মিলিত ছিল না বরং মধ্যবর্তীস্থানে হালকা কিছু পশম ছিলো, মধ্যবর্তী স্থানে একটি রগ ছিলো, যা রাগান্বিত অবস্থায় ভেসে উঠতো। (তাবারানী, শামায়েলে তিরমিযী)
রাসূলুল্লাহ (সা.) এর চোখের বর্ণনা।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চোখ দুটি ছিল বড়, আর চোখ বড় হওয়া সৌন্দর্যের নিশান। চোখের পাপড়ি ছিল ঝুলন্ত, ঈষৎ লাল রং যুক্ত চোখ, রাসূলুল্লাহ (সা.) এর দিকে তাকালে মনে হত সুরমা মাখা চোখ, অথচ চোখে সুরমা লাগানো থাকত না। (তিরমিযী)।
অর্থাৎ,তাঁর দিকে তাকালে মনে হত তিনি উভয় চোখে সুরমা লাগিয়েছেন। অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চোখে সুরমা লাগানো থাকত না।
রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নাক মুবারক।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাসিকা মুবারক ঈষৎ লম্বাটে, একটু উঁচু এবং সূচারু তীক্ষ্ণ ছিল। (ইবনে আসাকের)। অর্থাৎ, লম্বাটে গড়ন, মাঝখানে খানিকটা উঁচু, চিকন ও নাকের অগ্রভাগ তীক্ষ্ণ, যা নাসিকার সৌন্দর্যের একটি মাপকাঠি বলে বিবেচিত।
রাসূলুল্লাহ (সা.) এর গাল মুবারক।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর গন্ডদেশ ছিল পরিদৃষ্ট ও প্রস্ফুটিত। আম্মার ইবন ইয়াসির রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর ডানে ও বামে এমনভাবে সালাম ফিরাতেন যে,তাঁর দু গালের শুভ্রতা দেখা যেতো। (ইবনে মাজাহ)।
রাসূলুল্লাহ (সা.) এর মুখ মুবারক।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মুখ মুবারক প্রশস্ত ছিল। (সহীহ মুসলিম)। তাঁর সুন্দর মুখাবয়ব ও চমৎকার দন্তরাজি ছিল, আরবদের নিকট পুরুষদের প্রশস্ত মুখ অর্থাৎ বড় মুখ প্রশংসনীয় ছিল আর পুরুষদের ছোট মুখের অধিকারী হওয়াকে তারা নিন্দনীয় মনে করতো।
রাসূলুল্লাহ (সা.) এর গাত্রবর্ণ।
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শরীরের রং এর বর্ণনা দিয়েছেন, তিনি বলেনঃ তাঁর শরীরের রং ছিল উজ্জ্বল, বিকশিত। ধবধবে সাদাও নয় কিংবা গাঢ় তামাটে বর্ণেরও নয়। (সহীহ বুখারী)।
অর্থাৎ, উজ্জ্বল রং, (“আযহারুল লাউন” তথা লালিমা মিশ্রিত শ্বেত বর্ণ), ধবধবে সাদাও নয় কিংবা কৃষ্ণ বর্ণেরও নয়।
রাসূলুল্লাহ (সা.) এর দাঁড়ি মুবারক।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দাঁড়ি মুবারক ছিল কালো ও অতিশয় ঘন, তাঁর “দাঁড়ি খুব ঘন ছিলো”। (সহীহ মুসলিম)।
আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ যখন তাঁর ইন্তেকাল হয় তখন মাথা ও দাঁড়িতে কুড়িটি চুলও সাদা ছিলনা। (সহীহ বুখারী)।
রাসূলুল্লাহ (সা.) এর চুল মুবারক।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চুল মুবারক ছিল মধ্যম ধরনের, অতিশয় কোঁকড়ানও ছিল না,আর সম্পূর্ণ সোজাও ছিল না। (সহীহ বুখারী)।
রাসূলুল্লাহ (সা.) এর হাসির বর্ণনা।
কা’ব ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাসির বর্ণনা দিয়েছেন, তিনি বলেনঃ তাঁর চেহারা খুশী ও আনন্দে ঝলমল করতো। মনে হতো যেন চাঁদের একটি টুকরা। তাঁর চেহারা মুবারকের এ অবস্থা থেকে আমরা তা বুঝতে সক্ষম হতাম। (সহীহ বুখারী)।